Greenhouse

গ্রীন হাউজ

গ্রীন হাউজ হলো কাঁচ, ফাইভার কাঁচ অথবা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ অবকাঠামো যেখানে তাপমাত্রা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে SWR(short wave radiation) বা স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আকারে। কাঁচ বা স্বচ্ছ প্লাস্টিক আগত সূর্যরশ্মির তাপ ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্য LWR(long wave radiation) বা দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে রুপান্তরিত হয় যা গ্রীন হাউসের দেয়ালের বাধা অতিক্রম করতে না পেরে এর ভিতরে ট্র্যাপড(Traped) হয় বা আটকে যায়। আগত তাপ প্রতিনিয়ত গ্রীন হাউজ এর দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত ও প্রতিফলিত হয়। এছাড়া অভ্যন্তরের উদ্ভিদ থেকেও কিছু পরিমাণ তাপ বিকিরিত হয়।

শীতপ্রধান দেশের জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের গাছপালা ও শাকসবজি জন্মানোর উপযোগী নয়। তাই সেসব দেশে গ্রীন হাউজ এর কৃত্রিম-উষ্ণ পরিবেশে শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলের চাষ করা হয়। ভিতরের সবুজ গাছপালার কারনেই এর নাম গ্রীন হাউস। সারা বছর ধরে উন্নতমানের উদ্ভিদ ফলনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করাই গ্রীন-হাউস প্রযুক্তির উদ্দেশ্য। উন্নত দেশে গ্রীনহাউসে ফল, ফুল ও সবজির চাষ খুব সাধারণ বিষয়। গ্রীণ-হাউসের ফলে সারা বছর ধরে ফল, সবজি এবং ফুলের যোগান অব্যাহত থাকে।

বাণিজ্যিক গ্রীন হাউসগুলো কাচ দিয়ে নির্মাণ করা হয় এবং এগুলো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত। এই কাঠামোয় আলো, তাপ, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জলীয়-বাষ্প প্রভৃতি বিভিন্ন উপাদান, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবদ্ধ অবস্থায় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে উদ্ভিদের শ্বসন ও প্রস্বেদনের হার কমে যায়, ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি থমকে যায়। এ অসুবিধার কথা মাথায় রেখে গ্রীনহাউসের ছাদে একাধিক জানালার ব্যবস্থা করা হয় যাতে অতিরিক্ত তাপ ও জলীয় বাষ্প বেরিয়ে যেতে পারে। একবার গ্রীন হাউস বানালে ৮-১০ বছর সহজেই চাষ করা যাবে।

গ্রীন-হাউসে উৎপাদিত শাক-সবজির পুষ্টি মূল্য প্রাকৃতিক পরিবেশে উৎপন্ন শাক-সবজির মতো হলেও, কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে তুলনামূলক অনেক কম আসে বলে গ্রিন-হাউসের শাক-সবজি বেশি স্বাস্থ্যকর হতে পারে। নিঃসন্দেহে গ্রীন হাউসে উৎপাদিত শাক-সবজি প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত শাক-সবজির পরিপূরক হতে পারে।

দেশে শীতের মরসুমে সবজির দাম কমে যায়। ভাল দাম না মেলায় উদ্বিগ্ন থাকে চাষিরা। আবার গ্রীষ্মে তুলনায় সবজির দাম বেশি থাকে। তখন অগ্নিমূল্যে সবজি কিনতে গিয়ে হাত পোড়ে ক্রেতা সাধারণের। অসময়েও সবজির জোগান পর্যাপ্ত রাখতে গ্রিন হাউসে সবজির চাষ মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

গ্রীন হাউসের প্রাথমিক কাঠামো তৈরীর খরচ নির্ভর করে যে পদার্থ কাঠামো তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয় যেমন জি.আই পাইপ, এম.এস অ্যাংগেল, ফাইবার গ্লাস দ্বারা দৃঢ়বদ্ধ পলিয়েস্টার, কাঁচ, অ্যাক্রিলিক প্রভৃতির উপর। এছাড়াও গ্রীন হাঊস তৈরীর খরচ নির্ভর করে আস্তরণে ব্যবহৃত পদার্থের উপর। দামী পদার্থ দ্বারা গ্রীন-হাউস তৈরী করা খরচ-সাপেক্ষ। এই সমস্যার সমাধান হিসাবে কৃষকের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কম-খরচ সাপেক্ষ কাঠের তৈরী কাঠামো এবং পরীক্ষিত গ্রীন-হাউস ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্লাস্টিক গ্রীন-হাউসের ন্যায় প্রযুক্তি কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী, বিশেষ করে আমাদের দেশের বিচিত্র এবং ব্যাপ্ত কৃষি-আবহাওয়ার অবস্থার নিরিখে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের ক্ষেত্রে একে সম্ভাব্য প্রযুক্তি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেহেতু এতে অনেক বেশী ফলন পাওয়া যায় এবং অসময়ের শস্য চাষ করা যায়।

ইতিমধ্যেই পলি হাউসে সবজি ও ফুল চাষে বিপ্লব ঘটেছে যশোর সহ দেশের কয়েকটি এলাকায়। ইউরোপে ব্যবহৃত পদ্ধতি অনুযায়ী লোহার পাইপের খুঁটির উপরে ও চারদিকে ২০০ মাইক্রনের পলিথিন দিয়ে বানানো হয় এই ‘পলি-হাউস’। আর তাতে বছরব্যাপী সবজি এবং ফুলের চাষ করা সম্ভব। অর্থাৎ ফুল ও সবজি চাষে শীত ও গরমের কোন বাধাই থাকছে না। ফলে চাষিরা যেমন লাভের মুখ দেখছেন, তেমনি ক্রেতারাও সারা বছরই টাটকা সবজি ও ফুল পাচ্ছেন।

এই পদ্ধতিতে পানির অপচয় ঠেকানো যায়। সার দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে। প্লাস্টিকের চাদর থাকায় দুর্যোগের প্রকোপও অনেকটা ঠেকানো সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে পলি-হাউস পদ্ধতিতে ফসলের অন্তত ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয় । শেডে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকায় ঝুঁকি কম। কীটনাশকের খরচ ৭০ শতাংশ কমে যায়। সব মিলিয়ে নতুন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব


© All rights reserved © 2020 aagbd.com
Design & Developed BY ALL IT BD